― Advertisement ―

ভারতের সঙ্গে চুক্তির প্রতিবাদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে ছাত্র জোটের বিক্ষোভ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে রেল কানেকটিভিটি বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা চুক্তির প্রতিবাদে পুলিশের বাধা অতিক্রম করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে...

নদীতে রাজকীয় ভ্রমণে ফিরছে শত বছর পুরনো প্যাডেল স্টিমার

ফয়সাল আহাম্মেদ

প্রথম নজরে, মনে হতে পারে যেন ঔপনিবেশিক যুগের কোনো চিত্রকর্ম—একটি বিশাল, পুরোনো প্যাডেল স্টিমার ধীরে ধীরে মেঘনা নদীর শান্ত জলে এগিয়ে চলেছে, যার ডেক প্রশস্ত এবং ভেতরের অংশ রাজপ্রাসাদের মতো। কিন্তু এটি কোনো অতীতের ধুলো ঝেড়ে তোলা স্মৃতি নয়—এটি ২০২৫ সাল, এবং শতবর্ষী স্টিমার পিএস মাহসুদ আবার জীবন্ত হয়ে উঠছে, এক নতুন মিশন নিয়ে—পর্যটকদের নিয়ে বাংলাদেশের নদীপথে একটি ঐতিহ্যবাহী যাত্রায়।

বাবুবাজার ঘাটে নোঙর করে থাকা স্টিমারটি এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, তার রাজকীয় প্রত্যাবর্তনের আগে। আগামী ২৪ অক্টোবর ২০২৫, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, পরামর্শক ও অতিথিরা এক প্রাথমিক যাত্রায় অংশ নেবেন—যা শুধু একটি জাহাজ নয়, বরং বাংলাদেশের স্টিমার পর্যটনের পুনর্জন্মের এক ঐতিহাসিক মুহূর্তকে চিহ্নিত করবে।

“এটা শুধু একটি জাহাজ চালু করা নয়,” বলেন মোঃ সেলিম উল্লাহ, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) -এর চেয়ারম্যান। “এটি আমাদের অতীতকে রক্ষা করা, বহুদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ করা, এবং পর্যটনের মাধ্যমে নতুন অর্থনৈতিক পথ উন্মোচনের একটি সুযোগ।”

ইতিহাসের ভাসমান অংশ

এক সময় এভাবেই দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাজধানীর পথে ভেসে বেড়াত প্যাডেল স্টিমার। পুরনো ছবি

১৯২৯ সালে কলকাতার গার্ডেন রিচ ওয়ার্কশপে নির্মিত পিএস মাহসুদ একসময় অবিভক্ত বাংলার নদীগুলোতে রাজত্ব করত। একেবারে স্টিমচালিত যুগের একটি নিদর্শন, এটি প্রথম ডিজেল ইঞ্জিনে রূপান্তরিত হয় ১৯৮৩ সালে এবং পরে ১৯৯৫ সালে আধুনিক যান্ত্রিক গিয়ার সিস্টেমে। এখন, এটি পুনরায় সংরক্ষণ ও রূপান্তরিত হয়েছে—শুধু একটি জাহাজ হিসেবে নয়, বরং একটি জীবন্ত জাদুঘর হিসেবে।

স্টিমারটির পূর্ণ ধারণক্ষমতা ১,০০০ জন হলেও, ঢাকার সদরঘাট থেকে বরিশালের পর্যটন যাত্রায় প্রতি ট্রিপে প্রায় ৩২৩ জন যাত্রী নেয়া হবে, যাতে যাত্রা হয় আরামদায়ক ও কাস্টমাইজড।

চেয়ারম্যান সেলিম উল্লাহ জানান, প্রতি শুক্রবার সকালে, স্টিমারটি ঢাকা সদরঘাট থেকে যাত্রা শুরু করবে বরিশালের দিকে। আর শনিবার সকালে শুরু হবে ফিরতি যাত্রা—যাত্রীদের জন্য এটি হবে শুধু একটি যাত্রা নয়, বরং জাহাজের ভেতরে একদিন ও একরাতের পূর্ণাঙ্গ অভিজ্ঞতা।

শ্রেণি, সংস্কৃতি ও স্বাদে ভরপুর যাত্রা

প্রথম শ্রেণির কেবিনে প্রবেশ করলেই মনে হবে যেন আপনি পানির ওপর এক রাজপ্রাসাদে ঢুকেছেন। বিলাসবহুল সজ্জা, প্রাচীন আমলের সাজসজ্জা, আরামদায়ক বসার ব্যবস্থা—সব মিলিয়ে মনে হবে, ঔপনিবেশিক আমলের কোনো গভর্নর বা বিশ্বখ্যাত পর্যটক নদীর ধারে চা পান করছেন।

জাহাজে রয়েছে তিনটি আলাদা শ্রেণি, প্রতিটির জন্য রয়েছে নিজস্ব ডাইনিং রুম, যেখানে যাত্রীরা উপভোগ করতে পারবেন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার।

“খাবার অভিজ্ঞতার বড় একটি অংশ,” বললেন নাজরুল ইসলাম মিশা, বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তা। “আমরা চাই মানুষ যেন ইতিহাস শুধু দেখে না, তার স্বাদও গ্রহণ করে।”

যারা গল্পপ্রিয়, তাদের জন্য থাকবে ‘হেরিটেজ কর্নার’—যেখানে থাকবে স্টিমারের ইতিহাস, স্মৃতিচিহ্ন, এবং সেসব মহান ব্যক্তিদের গল্প, যারা একসময় এই স্টিমারে ভ্রমণ করেছিলেন।

সন্ধ্যার পর ডেকজুড়ে হবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, সঙ্গীত, লোকগাথ*—সবই খোলা আকাশের নিচে। যারা আরও সময় কাটাতে চান, তাদের জন্য বরিশালে ডকে রাতযাপনের সুযোগও থাকবে—যা পুরো অভিজ্ঞতাকে এক ঐতিহাসিক নদী-রিসোর্টের রূপ দেবে।

কেন প্যাডেল স্টিমার, আর কেন এখন?

সময়টি একেবারে উপযুক্ত। দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ যখন ইতোমধ্যেই তাদের নদীপথকে পর্যটনের জন্য কাজে লাগিয়েছে, বাংলাদেশও এবার প্রস্তুত।

“প্যাডেল স্টিমার আমাদের ঐতিহ্যের অংশ, ১৮ শতক থেকেই,” বলেন চেয়ারম্যান সেলিম উল্লাহ। “আমরা কেবল একটি গৌরবময় সম্পদকে পুনরুজ্জীবিত করছি। এখনো বিশ্বে হাতে গোনা কয়েকটি প্যাডেল স্টিমার সচল রয়েছে—বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে থাকবে?”

আর এটি শুধু স্মৃতির টান নয়, বরং ভবিষ্যতের সম্ভাবনাও। তিনি আরও বলেন, “পর্যটন দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছে। বাংলাদেশের রয়েছে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। সঠিক বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা ঐতিহ্যকে রূপ দিতে পারি সমৃদ্ধিতে।”