― Advertisement ―

spot_img

নতুন ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বেও থাকছেন সাবেক সমন্বয়কেরা

ডেস্ক রিপোর্ট: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের উদ্যোগে নতুন যে ছাত্রসংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে, তার সম্ভাব্য নাম ‘বিপ্লবী ছাত্রশক্তি’। এ সংগঠনের নেতৃত্বে থাকছেন কার্যক্রম...

আকাশ থেকে আগুন—দিয়াবাড়ির মাটি আজ কাঁদে

বাহাউদ্দিন গোলাপ :

দিয়াবাড়ির আকাশটা যে এত ভারী হতে পারে, তা কে ভেবেছিল? সকালবেলার হালকা রোদ, শিশিরভেজা ঘাসের তলায় খেলা করা ছোট্ট পায়ের শব্দ, পাখির কুহুতান—এই চিরচেনা ছন্দে হঠাৎই আঘাত হানল মৃত্যু। ঢাকার অন্যতম শান্ত আবাসিক অঞ্চল দিয়াবাড়িতে ‘মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ’-এর ভবনে বিধ্বস্ত হলো বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ। মুহূর্তেই ছিন্নভিন্ন হলো স্বপ্ন, ঝরে গেল প্রাণ, আহত হলো অনেক শিশু ও কিশোর হৃদয়। মাটি কাঁপল, আকাশ যেন আঁধার ঝরাল।

২১ জুলাই ২০২৫, দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি F-7 BGI প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনের উপর আছড়ে পড়ে। বিস্ফোরণ ও আগুন ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তেই। এ পর্যন্ত পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন বিমানটির একমাত্র বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম এবং ১৯ জন শিক্ষার্থী ও স্টাফ। গুরুতর দগ্ধ ও আহত হয়েছেন ১৭১ জন, যাঁদের মধ্যে অনেকেই ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) ও বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। তাঁদের অনেকে এখনো মৃত্যুর সাথে লড়ছেন।

রাষ্ট্রীয়ভাবে একদিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে এবং উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতি সহানুভূতি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি জানানো হয়েছে, “দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে এবং ভবিষ্যতের নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও কঠোর করা হবে।”

বিমান চলাচল ও প্রশিক্ষণের মতো উচ্চঝুঁকিপূর্ণ কাজকে ঘিরে সাধারণ নাগরিক জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যে কতটা জরুরি, তা যেন নতুন করে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এই দুর্ঘটনা। প্রশ্ন জাগে—শহরের ভেতরে, জনবহুল এলাকায়, বিশেষত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে এ ধরনের প্রশিক্ষণ কীভাবে অনুমোদিত হয়? কেন সেই আকাশে উড়াল দেওয়ার আগে যথেষ্ট নিরাপত্তা-বিশ্লেষণ হয় না? এই যে প্রাণ গেছে, এই যে শোকে ডুবে আছে একাধিক পরিবার—এই ক্ষতি কি শুধুই ‘দুর্ঘটনা’ বলেই শেষ করে দেওয়া যায়?

এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার দায় কেবল প্রযুক্তিগত ত্রুটি কিংবা প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতায় আটকে রাখা যায় না। এর পেছনে রয়েছে নীতিনির্ধারণের অসতর্কতা, অব্যবস্থাপনা ও কখনো কখনো দায়িত্বহীনতা। একটি জাতির ভবিষ্যৎ গড়ে ওঠে শিক্ষা ও নিরাপত্তার অভিন্ন ছায়ায়। আর সেই ভবিষ্যতের আঁতুড়ঘর—একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—যেখানে ছেলেমেয়েরা স্বপ্ন বুনে, সেখানে এমন মর্মস্পর্শী ঘটনা শুধু হৃদয়বিদারক নয়, রাষ্ট্রের জন্যও গভীর আত্মজিজ্ঞাসার কারণ।

তবু আমাদের মাথা নিচু করে দাঁড়াতে হয় এই অপূরণীয় শোকের সামনে। যারা চলে গেছেন, তাদের আত্মার শান্তি কামনায় আমাদের মন বিহ্বল। যারা আহত হয়ে মৃত্যুর কাছাকাছি থেকেও ফিরে এসেছেন, তাদের দ্রুত আরোগ্য হোক এই প্রার্থনা আমরা সকলেই করি। এই শোক যেন শুধু চোখ ভেজানো কান্নায় সীমাবদ্ধ না থাকে; এই শোক হোক এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়ানোর প্রেরণা।

প্রশ্ন আছে, জবাবও চাই। ভবিষ্যতে যেন এমন দুর্ঘটনার কলো ছায়া না নামে আমাদের জীবনচর্যায়। রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে, প্রতিটি সিদ্ধান্তে চাই দূরদৃষ্টি, চাই সুশাসনের নির্মোহ প্রয়োগ। প্রশিক্ষণ হোক প্রশিক্ষণঘাঁটিতে, শহরের আকাশ যেন থাকে নিরাপদ, যেন শিশুরা নির্বিঘ্নে স্বপ্ন দেখে, পাখির মতো ডানা মেলে উড়তে শেখে।

আমরা চাই না এমন মেঘ আর নামে পৃথিবীর আকাশে, আমরা চাই না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কান্নার রোল। আমরা চাই না মৃত্যু, আমরা চাই জীবন—সবুজে মোড়ানো, শান্তির সুবাতাসে ভরা জীবন। আজকের এই ট্র্যাজেডি যেন এক নতুন প্রতিশ্রুতির সূচনা হয়—‘আর কখনো না’।